ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ , ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমু-আনিসুল-শাজাহানসহ সাত জন নতুন মামলায় গ্রেফতার টিউলিপ বাংলাদেশি এনআইডি পাসপোর্ট ও টিআইএন নিবন্ধন রাজধানীতে অটোরিকশা চালকদের তাণ্ডব অল্প সময়ে একাধিক ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা বাড়াচ্ছে বেনিনে আল-কায়েদার অনুসারী গোষ্ঠীর হামলায় ৭০ সৈন্য নিহত রাশিয়া-ইউক্রেনের চুক্তি এই সপ্তাহেই হওয়ার আশাবাদ ট্রাম্পের ইস্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলে ৫-১৫ বছর হামলা বন্ধ দিন শেষে বাংলাদেশ পিছিয়ে মাত্র ২৫ রানে বাংলাদেশে জীবননাশের শঙ্কায় ছিলেন হাথুরু! স্বর্ণের আইফোন উপহার পেলেন শাহীন সাবেক কোচের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলো পিসিবি কেন্দ্রীয় চুক্তির তালিকা প্রকাশ করলো বিসিসিআই নাটকীয় জয়ে শিরোপার দৌড়ে টিকে রইলো রিয়াল শিরোপার দোড়গোড়ায় লিভারপুল ফাইনালে অনিশ্চয়তা, চোটে পড়লেন লেভানডোভস্কি প্রতিটি চুমুকে নতুন অভিজ্ঞতা ‘ম্যাজিক চা’ সাতক্ষীরায় কৃষকের পাকাধানে মই দিয়েছে বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা বাড়লে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে একনেকে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ প্রকল্প অনুমোদন

ক্রমাগত লোকসানে পেশা ছাড়ছেন লবণচাষিরা

  • আপলোড সময় : ২১-০৪-২০২৫ ০৩:০২:১০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৪-২০২৫ ০৩:০২:১০ অপরাহ্ন
ক্রমাগত লোকসানে পেশা ছাড়ছেন লবণচাষিরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি ক্রমাগত লোকসানে লবণচাষীরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। লবণের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, খরচের তুলনায় দাম অর্ধেকে নেমে যাওয়া, ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাওয়ায় চাষীরা লবণ চাষ ছাড়ছেন। মূলত মহাজনরাই বেশির ভাগ লবণ মাঠের মালিক। তাদের কাছ থেকে মাঠ ইজারা নিয়ে চাষীরা লবণ চাষ করেন। আরেকটি পক্ষ নগদ অর্থের জোগান দেয়। লবণের মাঠ ইজারা নেয়ার সময় কিছু টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর ওই টাকার জন্য বিত্তশালীদের কাছ থেকে ঋণ নেন কৃষকরা। কিন্তু লোকসানে মৌসুম শেষে ওই টাকা পরিশোধ করতে পারে না চাষীরা। অথচ আগে লবণ চাষে পুঁজি কম লাগতো কিন্তু উৎপাদন বেশি হতো। বিক্রি করে লাভও হতো। কিন্তু এখন উল্টো লোকসান হয় মোটা টাকা। বিসিক এবং লবণচাষীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলায় দেশের মোট লবণ উৎপাদনের ৮৭ শতাংশ হয়। বাকিটা চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে আসে। দেশে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা লবণের উৎপাদন বাড়লেও চাষীদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। এবার মৌসুমের শুরুতে মাঠের লবণ মণপ্রতি ৩০০ টাকার ওপরে বিক্রি হলেও এখন মৌসুমের মূল সময়ে দাম উৎপাদন খরচের অর্ধেকে নেমে এসেছে। এভাবে প্রতি বছর লোকসান দিয়ে চাষীরা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক লবণচাষী বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের থেকে আগে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে ঋণমুক্ত হতে তারা বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। সূত্র জানায়, এবার লবণ মৌসুমের মূল সময়ে এসে হঠাৎ কমে গেছে দাম। গত বছর এ সময়ে (মার্চ-এপ্রিলে) প্রতি মণ লবণ ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা এবং ২০২৩ সালে ৪০০ টাকার ওপরেও বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন তা নেমে এসেছে ১৫০ টাকায়। তার মধ্যে দালালকে প্রায় অর্ধেক দিতে হচ্ছে। তাছাড়া দেশের লবণ চাষে এখনো উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি। লবণ চাষের জমিতে অন্য ফসল না হওয়ায় চাষীরা একরকম বাধ্য হয়েই লবণ চাষ করেন। তবে যাদের লবণের জমি নেই তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সূত্র আরো জানায়, লবণ চাষীরা ন্যায্যমূল্য না পেলেও দেশে লবণের উৎপাদন বাড়ছে। বিসিকের তথ্যমতে, এ অঞ্চলে ১৯৬০-৬১ মৌসুম থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছর ৬ হাজার ৭৭৪ একর জমিতে ১ দশমিক ২১ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়। বর্তমানে দেশের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ স্থানীয় উৎপাদন থেকেই পূরণ হচ্ছে। ২০২১-২২ মৌসুমে ২৩ দশমিক ৩৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হয়েছে ১৮ দশমিক ৩১ লাখ টন। ২০২২-২৩-এ ২৩ দশমিক ৮৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ২২ দশমিক ৩২ লাখ টন এবং ২০২৩-২৪ মৌসুমে ২৫ দশমিক ২৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ২৪ দশমিক ৩৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে চাহিদা ধরা হয়েছে ২৬ দশমিক ১০ লাখ টন। এরই মধ্যে ১৭ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত উৎপাদন চলবে। তবে লবণের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে চাষীদের খরচও। ২০২৪-২৫ মৌসুমে জমির ইজারা, পলিথিন, শ্রমিক, পানি বাবদ এক মণ লবণ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৫০ টাকা। তার মধ্যে জমির ইজারা বাবদ ২০০ টাকা, পলিথিন, পানি ও সেচ বাবদ ২০ টাকা এবং দুই ধাপে শ্রমিক বাবদ ১৩০ টাকা খরচ হয়। গত তিন বছরের তুলনায় এবার মণপ্রতি ২৯ টাকা খরচ বেড়েছে। আর ২০২৩-২৪-এ প্রতি মণ উৎপাদনে খরচ ছিল ৩২১ টাকা, ২০২২-২৩-এ ২৭০ টাকা এবং ২০২১-২২-এ ২৬৩ টাকা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও এ সময়ে (মার্চ-এপ্রিল) বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়, ২০২৩-২৪-এ ২২০-২৫০ টাকা, ২০২২-২৩-এ ছিল ২৮০-৩০০ টাকা। এদিকে এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম জানান, সারা দেশের লবণের চাহিদা কক্সবাজার পূরণ করছে। অথচ লবণচাষীদের জন্য কোনো ঋণ, আর্থিক প্রণোদনা নেই। এখনো গত মৌসুমের ১০ হাজার টন লবণ মজুদ আছে। চাষীরা দাম না পেলেও মিল মালিকরা ঠিকই ব্যবসা করছে। কিছু সিন্ডিকেট এ ব্যবসাটাকে নিচের দিকে টেনে ধরছে। গত সরকারের আমলে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে একটা কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করা হতো। এবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের নামে আমদানি করার কথা শুনছি। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার পরও আমদানি করা হলে লবণ চাষী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাগ্যে পরিবর্তন আসবে না। অন্যদিকে বিসিকের দাবি লবণ চাষীদের বার্ষিক বিশেষ ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। ২০২২-২৩-এ ১১৩ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে ৫৬ দশমিক ৫০ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪-এ ১৩১ জনকে ৬৫ দশমিক ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ মৌসুমের ঋণ এ মাসে দেয়া হবে। তবে এসব ঋণের অর্ধেকই পরিশোধ করতে পারেননি চাষীরা। এ বিষয়ে বিসিকের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, বিসিক থেকে প্রতি বছর কিছু চাষীকে বিশেষ ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু লবণের দাম কম থাকায় ওই ঋণ চাষীরা পরিশোধ করতে পারেন না। এখন বিসিক এ বিষয়ে ঋণখেলাপির মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য